কৃষিবিদ সাবিহা সুলতানা
প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে। তাই কৃষির মধ্যেই মিশে রয়েছে আমাদের গ্রাম বাংলার হাজার বছরের গৌরবময় ইতিহাস। আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কৃষি ও কৃষকের অবস্থান বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই নির্বিঘেœ উৎপাদনের ক্ষেত্রে রোগ বালাই ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণীর আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত আমাদের লড়াই করতে হয়। বাংলাদেশের কৃষকের মতে এক নম্বর বালাই হচ্ছে পোকামাকড় এবং দুই নম্বর বালাই হচ্ছে ইঁদুর। প্রাকৃতিক পরিবেশের বৃহৎ একটি অংশ ইঁদুর দখল করে আছে। মানুষের কৃষি জমি, গ্রাম-শহর, রাস্তা-ঘাট, বাঁধ, সেচের নালা, হাস-মুরগীর খামার, বনজঙ্গল এবং সর্বোপরি যেখানে লোকবসতি রয়েছে সেখানে ইঁদুরের বিচরণ রয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে ফসল উৎপাদন এবং গুদামজাত করে তা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এরা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এরা শুধুমাত্র শস্য খেয়েই ক্ষান্ত হয় না এবং তা কেটেকুটে নষ্ট করে এবং লোম মিশিয়ে থাকে। মানুষ ও গবাদি পশুতে রোগবালাই সংক্রমণ করে এবং সবশেষে বলা যায় এরা পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিষয়ক সংস্থার এক গবেষণায় দেখা যায় যে, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা বিশ্বের অন্যতম ইঁদুর উপদ্রব এবং বংশ বিস্তারকারী এলাকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এখানকার উপক‚লীয় লোনা ও মিঠা পানির মিশ্রণ ইঁদুরের বংশবিস্তারের জন্য অনুক‚ল। সারা পৃথিবীতে সর্বমোট ১৭০০ টি ইঁদুরের প্রজাতি শনাক্ত হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশে ১২ টির অধিক ক্ষতিকর প্রজাতি শনাক্ত হয়েছে।
ইঁদুরের শ্রেণীবিন্যাস : ইঁদুর বিভিন্ন প্রজাতির হতে পারে। বসবাসের স্থানের ভিত্তিতে সাধারণত ইঁদুরের ভাগ করা যেতে পারে। যথা-(ক) মাঠে বসবাসকারী ইঁদুর। (খ) বাসাবাড়িতে বসবাসকারী ইঁদুর।
(ক) মাঠে বসবাসকারী ইঁদুর
(১) মাঠের ছোট কালো ইঁদুর : এদের দ্বারা মাঠ ফসলের সবচাইতে বেশি ক্ষতি হয়ে থাকে। এরা লম্বায় প্রায় ৭.৫-৩০ সেমি. ও ওজন প্রায় ১৫০-৩৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। দেখতে কালো ধুসর রঙের। শরীরের তুলনায় লেজ কিছুটা খাটো। প্রায় সবজাতীয় কৃষি ফসলে এরা আক্রমণ করে থাকে।
(২) মাঠের বড় কালো ইঁদুর : এরা দেখতে প্রায় মাঠের ছোট কালো ইঁদুরের মত। পার্থক্য হল এদের ওজন ৩৫০-১০০০ গ্রাম, আকারে বেশ বড়, মুখ সামান্য সরু। এরা সাতার পটু। গায়ের রং কালচে ধুসর বা তামাটে। এদের পেছনের পা বেশ বড় এবং কালো বর্ণের। ধান ফসলের বেশিরভাগ ক্ষতি এদের দ্বারা হয়ে থাকে। সাধারণত নিচু এলাকায় এদের বেশি দেখা যায়।
(খ) বাসাবাড়িতে বসবাসকারী ইঁদুর
(১) ঘরের ইঁদুর বা গেছো ইঁদুর: এদের দেহের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৭-২২ সেমি.। লেজের দৈর্ঘ্য ৫-২৩ সেমি. এবং মাথা ও শরীরের তুলনায় লেজ লম্বা হয়ে থাকে। এদের দেহ লম্বাটে এবং রং বাদামি দেহের নিচের দিকটা সাদাটে। এরা ঘরে অবস্থান করে এবং ঘরে রাখা খাদ্যশস্য, ফলমূল, গুদামজাত শস্য ইত্যাদির ক্ষতি করে। এদের সাধারণত বাসাবাড়িতে অথবা বাড়ির আশেপাশে বা গাছে বেশি দেখা যায় এবং এদের মাঠে কম দেখা যায়।
(২) নেংটি ইঁদুর : এরা আকারে ছোট, মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৩-১০ সেমি. এবং ওজন প্রায় ১৪-২০ গ্রাম হয়ে থাকে। এদের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে ডাকা হয় যেমন, বাত্বি ইঁদুর বা শইল্লা ইঁদুর। গায়ের রং ছাই না তামাটে এবং পেটের রং হালকা ধূসর বর্ণের। এরা বাসাবাড়িতে ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে যেমন খাদ্যশস্য, কাপড়-চোপড় কাটা থেকে শুরু করে বিদ্যুতের তার পর্যন্ত কেটে ফেলে।
ইদুরের বংশবিস্তার
উপযুক্ত এবং অনুক‚ল পরিবেশে একজোড়া প্রাপ্ত বয়স্ক ইঁদুর থেকে এক বছরে ইঁদুরের বংশবৃদ্ধি পেয়ে ২০০০- ৩০০০টি হতে পারে। একটি স্ত্রী ইঁদুরের বয়স ৩ মাস পূর্ণ হলে বাচ্চা দেয়ার ক্ষমতা অর্জন করে। বাচ্চা প্রসবের পর ২ দিনের মধ্যেই স্ত্রী ইঁদুর পুনরায় গর্ভধারণ করতে পারে। এদের গর্ভধারণ কাল প্রজাতিভেদে ১৮-২২ দিন হয়। সারা বছরই বাচ্চা দিতে পারে তবে বছরে ৫-৭ বার এবং প্রতিবারে ৬-১০টি বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকে। মা ইঁদুর এদের যতœ বা লালন পালন করে থাকে। এদের ১৪-১৮ দিনে চোখ ফোটে। চার (৪) সপ্তাহ পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করে এবং ৩ (তিন) সপ্তাহ পর থেকে শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করে। পাঁচ ( ৫) সপ্তাহ পর থেকে এরা মা এর সঙ্গ থেকে আলাদা হয়ে যায়। একটি ইঁদুরের জীবনকাল ২-৩ বছর হয়ে থাকে।
ইঁদুরের উপস্থিতির লক্ষণসমূহ
কর্তনের শব্দ, নখের দ্বারা আঁচড়ানোর শব্দ, কোনো কিছু বেয়ে ওঠার অথবা নামার শব্দ, ক্ষণস্থায়ী চিচি শব্দ, চলাচলের রাস্তায় মল, নোংরা দাগ, পায়ের ছাপ, ইঁদুর যাতায়াত পথের সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি দ্বারা ইঁদুরের উপস্থিতি অনুমান করা যায়। ইঁদুরের বাসা ও তার আশপাশে ছড়ানো ছিটানো খাবার, ইঁদুরের গন্ধ এবং পোষা প্রাণীর লাফ ঝাঁপ বা অদ্ভুত আচরণ বা উত্তেজনা ইঁদুরের উপস্থিতি নির্দেশ করে। গুদামের ক্ষতির চিহ্ন দেখে এর আক্রমণের লক্ষণ বোঝা যায়। এ ছাড়াও আক্রান্ত ফসল, গম রাখার বস্তা কাটা দেখে, ইঁদুরের খাওয়া ধানের তুষ দেখে এদের উপস্থিতি বোঝা যায়। ঘরে বা তার পাশে ইঁদুরের নতুন মাটি অথবা গর্ত, ফসলের মাঠে, আইলে ও জমিতে, বাঁধ, পুল ইত্যাদির পাশে গর্ত দেখে ইঁদুরের উপস্থিতি বোঝা যায়। ইঁদুর বিভিন্ন ফসলে বিভিন্নভাবে ক্ষতি করে থাকে।
বিশে^র অনেক দেশ ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর উপদ্রবে অতীষ্ঠ । এর ক্ষতিকর প্রভাব জনস্বাস্থ্যে ও এমনকি প্রাণী স্বাস্থ্যে ফেলছে। ইঁদুর ৬০টির বেশি রোগের জীবাণু বহন, সংরক্ষণ ও বিস্তার করে থাকে। অনেক ধরনের জুনোটিক রোগ, নানা প্রকার চর্মরোগ, কৃমিরোগ, ইঁদুর কামড়ানো জ্বর, জন্ডিস রোগের জীবাণু ইঁদুর দ্বারা বিস্তার ঘটে। ইঁদুরের মলমূত্র, লোমের মাধ্যমে এসব রোগের জীবাণু বিস্তার ঘটে।
ইঁদুর বাহিত রোগ ও তার লক্ষণ
মিউরিন টাইফাস (জরপশবঃঃংরধ ঃুঢ়যর) : সাধারণত এর প্রাদুর্ভাবের রিপোর্ট সমস্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে রয়েছে। ফ্লি (ঋষবধ) পোকার কামড়ে অথবা আক্রান্ত মলের অথবা দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ফ্লির মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার ঘটে। যদিও এ রোগের কারণে মানুষের মধ্যে বৃহৎ পরিসরে রোগের লক্ষণ দেখা দেয় কিন্তু মানুষ মৃত্যু হার অনেক কম।
টিক টাইফাস (জরশবঃঃংরধ পড়হড়ৎরর) : কুকুর এ রোগের জন্য প্রধান বাহক, কিন্তু ইঁদুরও গুরুত্বপূর্ণ বাহক হিসাবে কাজ করে। এ রোগে আক্রান্ত টিকে (এক প্রকার কীট) কামড়ানোর ফলে মানুষে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। টিক সমস্ত এশিয়া মহাদেশে এ রোগের বিস্তারে জড়িত।
স্ক্রাব টাইফাস (ঙৎরবহঃরধ ঃংঁঃংঁমধসঁংযর) : নানা রকম ইঁদুর জাতীয় প্রাণীরা (রোডেন্ট) সমস্ত এশিয়াজুড়ে এ রোগের প্রধান বাহক বা আধার। ‘চিগার’ (ঈযরমমবৎং) যা বিভিন্ন প্রকার মাকড়ের শূককীট নামে পরিচিত, ট্রম্বিকিউলিড গণভুক্ত। তাদের কামড়ে মানুষের মধ্যে রোগ সংক্রমিত হয়। যদি প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করা হয় তাহলে মানুষের মৃত্যু হার কম হবে।
হানট্যান (ঐধহঃধধহ) ভাইরাস বা রক্তক্ষরা জ¦র : হানট্যান ভাইরাস পৃথিবীর অনেক শহরে ইঁদুরের দেহে শনাক্ত করা হয়েছে। এ ভাইরাস সাধারণত পোষক হতে পোষকে আক্রান্ত লালা, মূত্র এবং মলের মাধ্যমে বিস্তার ঘটে থাকে। কিছু স্ট্রেইনের মানুষের ওপর অল্প-বিস্তর প্রভাব রয়েছে।
কুইন্সল্যান্ড টিক টাইফাস অথবা স্পটেড জ¦র (জরপশবঃঃংরধ ধঁংঃৎধষরং) : এ রোগ সাধারণত অস্ট্রেলিয়া পূর্ব উপক‚ল ধরে নি¤œ অবস্থান পর্যন্ত দেখা যায় এবং এ রোগ ওীড়ফরফ টিকস বহন করে। মারসুপাইয়াল মাইস, ব্যান্ডিকোটস, পুশাম (চড়ংংঁসং), ইঁদুর এবং মাইস (সরপব) এ রোগ জীবাণুর প্রাকৃতিক বাহক । যদিও এ রোগের কারণে মানুষের মাঝে ব্যাপক লক্ষণ দেখা যায় কিন্তু মৃত্যু হার কম।
লেপটোস্পাইরোসিস (খবঢ়ঃড়ংঢ়রৎড়ংরং): খবঢ়ঃড়ংঢ়রৎধ গণভুক্ত নানা রকম স্পাইরোকিটস (ঝঢ়রৎড়পযধবঃবং) জুনোটিক রোগের জীবাণু মাঠের কালো ইঁদুর বহন ও বিস্তার করে। এর রোগের পোষক হিসাবে প্রায় সকল ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর প্রজাতিরা কাজ করে। মানুষ যদি খোলা স্থানে ইঁদুরের প্রস্রাব দ্বারা দূষিত পানি, আর্দ্র মাটি অথবা উদ্ভিদের সংস্পর্শে আসে তাহলে মানুষে সংক্রমণ ঘটে। অধিকাংশ প্রজাতির মৃত্যু হার কম হয়। সাধারণত এ রোগের লক্ষণ ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের অনুরূপ হয় এবং কয়েক দিন হতে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত টিকে থাকে। অনেকে এ রোগের লক্ষণকে আবার ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গু জ¦র ভেবে ভুল করে। এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে যারা রোপণকৃত গাছপালা অথবা মাঠে কাজ করে তাদের।
ইঁদুর কামড়ানো জ¦র বা র্যাট বাইট ফিভার (ঝঢ়রৎরষষঁস সরহঁং) : এ রোগের বিস্তার সাধরণত ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর কামড়ানোর দ্বারা ঘটে থাকে। স্পাইটোকিটসের (ঝঢ়রৎড়পযধবঃব) কারণে এ রোগ হয়। সমগ্র পৃথিবীতে এ রোগ দেখা যায়। এ রোগ মানব দেহে অনেক সপ্তাহ পর্যন্ত সুপ্তবস্থায় থাকে এবং ক্ষত সেরে ওঠার/শুকানোর পর উপসর্গ সাধারণত দেখা যায়।
প্লেগ (ণবৎংরহরধ ঢ়বংঃরং) : এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। প্রাথমিকভাবে এ রোগ শনাক্ত করা গেলে এন্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা করা যায়।
টক্সোপ্লাজমোসিস (ঞড়ীড়ঢ়ষধংসড়ংরং) : ঈড়পপরফরধহ বর্গের ঞড়ীড়ঢ়ষধংসধ মড়হফর প্রজাতি এ রোগের কারণ । গৃহপালিত বিড়াল এ রোগের প্রাথমিক পোষক । এ রোগের মধ্যবর্তী পোষক ইঁদুর ও মাইসসহ (সরপব) অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণী।
সালমোনেলোসিস (ঝধষসড়হবষষড়ংরং): সালমোনেলা (ঝধষসড়হবষষধ) ব্যাকটেরিয়া দ্বারা পৃথিবীব্যাপী মানুষে সংক্রমণ হয়। সাধারণত এ রোগে আক্রান্ত ইঁদুর ও মাইসের মল দ্বারা দূষিত পানি অথবা খাদ্য গলাধঃকরণের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কিন্তু এরূপ খাদ্য যা সঠিকভাবে প্রস্তুত নহে তার দ্বারা এ রোগ হতে পারে। অনেক প্রজাতির বিভিন্ন রকমের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে।
লাসা জ¦র (খধংংধ ঋবাবৎ) : ১৯৬৯ সালে নাইজেরিয়ার বোর্নো প্রদেশের লাসা শহরে লাসা জ¦র সর্বপ্রথম আবিষ্কার হয়। এ রোগটি লাসা ভাইরাসের এক ধরনের জীবাণুর সংক্রমণে হয় । মানুষ লাসার ভাইরাসে আক্রান্ত হয় যদি কোনোভাবে ন্যাটাল মাল্টিম্যামেট ইঁদুরের মলমূত্রের সংস্পর্শে আসে। এছাড়াও ফাটা বা ক্ষত হওয়া ত্বক অথবা শ্লেষা নিঃসরক ঝিল্লির মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে লাসা জ¦রের জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। প্রায় ৯০ জনের অধিক লোক মারা যায় ২০১৮ সালে নাইজেরিয়ায় প্রাণঘাতী লাসা জ¦রে ।
অন্যদিকে ইঁদুর তিন ধরনের কৃমি বহন করে যেমন- নেমাটোড (কেঁচো কৃমি), ট্রিমাটোড (চ্যাপ্টা কৃমি) এবং সিসটোড (ফিতাকৃমি)। এসব কৃমি বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়ায়, যেমন- অহমরড়ংঃৎড়হমুষঁং পধহঃড়হবহংরং ও ঈধষধফরঁস নবঢ়ধঃরপঁস রোগ। শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হলে মানসিক ভারসাম্যহীন বা হাবাগোবা হয়।
বাসাবাড়িতে ইঁদুর দমনে করণীয়
ইঁদুর যেহেতু ময়লা আবর্জনা পছন্দ করে তাই আবর্জনা ফেলার বিন পরিষ্কার রাখতে হবে এবং ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং বাড়িতে ইঁদুরের প্রবেশপথ বন্ধ রাখতে হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। খাদ্যদ্রব্য ভালোভাবে ঢেকে রাখতে হবে। খাবার তৈরি, খাওয়া ও পানীয় পানের পূর্বে হাত ভালোভাবে ধুতে হবে এবং খাবার প্লেট ও ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। কোন নির্দিষ্ট স্থানে ইঁদুর কামড় দেয় তাহলে অতি দ্রæত আক্রান্ত স্থান সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে। বাসাবাড়িতে বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে এদের দমন করা যেতে পারে। শহরাঞ্চলগুলোতে গ্রামাঞ্চলের তুলনায় ইঁদুরের সংখ্যা বেশি। কারণ ডাস্টবিনগুলো ইঁদুরের বছরব্যাপী খাদ্য ও পানীয় এবং বাসস্থানের নিশ্চয়তা দেয়। প্রতি বছর মশা নিধন কর্মসূচির মতো ইঁদুর নিধন কর্মসূচী সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে নেয়া যেতে পারে।
একথা অনস্বীকার্য যে, আমাদের কৃষক সমাজের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং বর্তমান সরকারের সময় উপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে দেশের জনগণের দৈনন্দিন খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণের পরও উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদন সম্ভবময় হচ্ছে। এর পাশাপাশি শিল্পোৎপাদন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং রপ্তানী বাণিজ্যে কৃষি খাতের অবদান অনস্বীকার্য। ইঁদুরের সমস্যা এমন একটি সমস্যা যেখানে একজন ব্যক্তির একক প্রচেষ্টার মাধ্যমে পুরোপুরি দমন সম্ভব নয়। ইঁদুর গর্তে বসবাস করে তাই ইঁদুরের দমনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন যৌথভাবে সমন্বিত এবং সম্মিলিত চেষ্টা এবং পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযু্িক্ত উদ্ভাবন করে চলেছে যা ইঁদুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ফলপ্রসূ। আর তাহলে আমরা আশা করতে পারি ইঁদুরের মাধ্যমে প্রতিবছর যে বিপুল পরিমাণে ক্ষতি হয়ে থাকে তা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, মিরপুর, কুষ্টিয়া, মোইল নম্বর- ০১৭৬৮৪৩৬৪৯৩, ই-মেইল : uaomirkush@gmail.com